কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের কাইচ্ছুটি এলাকায় ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট | ছবি: এই বাংলাদেশ

জসিম চৌধুরী নিলয়, চৌদ্দগ্রাম (কুমিল্লা): কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে মাটি ব্যবস্হাপনা আইন সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বেপরোয়া হয়ে কয়েকটি প্রভাবশালী সিন্ডকেট দিবা- রাত্রি মাটি কেটে ড্রামট্রাক, পিকআপ ও ট্রাক্টরের মাধ্যমে ব্রিকফিল্ড গুলোতে মাটি সরবরাহ করছে। চতুর্দিকে যেন মাটি কাটার ধুম পড়েছে। উপজেলার প্রায় বিশ- পুচিশ টি স্হানে প্রভাবশালী চক্রগুলো নির্বিচারে ভেকু ও এসকেভেটর মেসিনের সাহায্যে মাটি কেটে নিচ্ছে। সঙ্গবদ্ব কয়েকটি মাটি খেকো সিন্ডিকেটের হাত থেকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বনের জমি, খালের পাড়, সরকারি খাস জমি আর আবাদি জমির মাটি রক্ষা পাচ্ছেনা।

মাঝে মধ্যে প্রশাসন মোবাইল কোর্টে জরিমানা আর সাজা দিয়েও থামাতে পারছেনা মাটি খেকোদের দৌরাত্ম। উপজেলার তেরটি ইউনিয়নে প্রায় ৪৫টি ব্রিকফিল্ডে ফসলি জমিনের উর্বর মাটি কেটে পাহাড়ের মতো স্তুপ করার কাজে ব্যস্ত রয়েছে ফিল্ড মালিক ও মাটি খেকো চক্র গুলো। প্রশাসনকে ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে রাতের আধাঁরে চলছে মাটি কাটা উৎসব। এসব মাটি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ব্রিক ফিল্ডে, নিচু জায়গা ভরাটের কাজে। মিনি ট্রাক, ভারী ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি পরিবহন করায় নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ পাকা ও মাটির রাস্তাগুলো। ব্রিকফিল্ড ও মাটি কাটা সিন্ডিকেটের মুল হোতা হচ্ছ, গোলপাশা এলাকার আমানগন্ডা উত্তর পাড়ার মৃত হাজী পঁচা মিয়ার ছেলে আল রায়হান আলকাছ। তার নিজের ৫ টি ভেকু, এসকেভেটর ৩টি, ভেকু পরিবহনের জন্য রয়েছে লরি / রোবট ২টি। একই এলাকার বাবুচি গ্রামের জসিম এর রয়েছে ভেকু ৩টি এবং বাতিসা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর গ্রামের মনছুর মিয়া চট্রগ্রাম থেকে ভাড়ায় চালিত ৩ টি ভেকু দিয়ে দক্ষিণ চৌদ্দগ্রামের কয়েকটি ইউনিয়নে অবাধে মাটি কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

সরেজমিনে অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও শুকনো মৌসুম আসার সাথে সাথে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মাটি কাটা সিন্ডিকেটগুলো অবৈধভাবে মাটি কাটায় ব্যস্ত রয়েছে। যত্রতত্র এবং বনাঞ্চলের মাটি কাটার ফলে পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আবাদী জমির টপ সয়েল কাটার ফলে নষ্ট হচ্ছে জমির উর্বরতা।

উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের শিলরী, ভারতীয় সীমান্তবর্তী সিঙ্গাপুর মার্কেট সংলগ্ন জিরো পয়েন্টে, কাইচ্ছুটি। গুনবতী ইউনিয়নের দশবাহা, চাপাচৌ জিকডডা রাজবল্লভপুর বুধড়া, বান্দের জলা। জগন্নাথদিঘী ইউনিয়নের পায়ের খোলা, সোনাপুর, সীমান্তবর্তী কেচকিমুড়া, দক্ষিণ বেতিযারা। চিওড়া ইউনিয়নের সীমান্ত ঘেঁষা ডিমাতলি, চাপিরতলা,নোয়াপুর,চরপাড়া। কনকাপৈত ইউণিয়নের পন্নারা গাংপাড়, তারাশাইল, করপাটি। বাতিসা ইউনিয়নের বসন্তপুর, সীমান্তবর্তী আনন্দপুর, কালিকাপুর, চান্দকরা,লুদিয়ারা,বশকরা কুচা পাথর। মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ফেলনা, বারাইশ, ছাতিয়ানি। ঘোলপাশা ইউনিয়নের শালুকিয়ার সীমান্তবর্তী বনাঞ্চল, ইশানচন্দ্র নগর, আমানগন্ডা। কালিকাপুর ইউনিয়নের চুপুযা, বর্ধনবাড়ি। উজিরপুর ইউনিয়নের শামুকসার, ভাটবাড়ি, সীমান্তবর্তী সাহেবের টিলা, বেলঘর। শ্রীপুর ইউনিয়নের নালঘর, চৌমুহনী। শুভপুর ইউনিয়নের উনকোট গাং পাড়, পাশাকোট, হাজারি পাড়া, কাছারি পাড়া। কাশিনগর ইউনিয়নের সাহাপুর, চলন্ডা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হোসেন বলেন, মাটি কাটার বিষয়ে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। মাটি কাটার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্হা নেয়া হবে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তমালিকা পাল বলেন, ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ীকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা ও সাজা দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে। যেসব স্হানে মাটি কাটা হচ্ছে, খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নেওয়া হবে। এতেও থামানো যাচ্ছেনা মাটি খেকো চক্র গুলোকে।